সারাদেশ

পরিবর্তিত বাংলাদেশের স্বপ্ন তরুনদের প্রধান উপদেষ্ঠা বরাবর প্রস্তাবনা প্রদান ইয়্যাসের

  মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১০:২৮:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদন:

পরিবর্তিত বাংলাদেশ চাই শীর্ষক প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মো. ইউনুস বরাবর রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের মাধ্যমে প্রেরণ করেছে রাজশাহীর তরুণেরা। বিভিন্ন সেচ্চাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ করে এটি প্রেরণ করে।

আজ রবিবার বিকেলে ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়ই’ এ প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা রাজশাহীর উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকের স্মাক্ষরিত ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশ চাই শীর্ষক’ এ প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়।

প্রস্তাবনায় সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. বিধান চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির পুরকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ড. প্রকৌঃ মোঃ জাকির হোসেন খান, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহক ওয়ালিউর রহমান বাবু, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ রাজশাহীর আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহীর সভাপতি উপেন রবিদাস, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক সাবিত্রি হেমব্রম, ইচ্ছা থেকে শুরু রাজশাহীর সভাপতি সাবরিনা শারমিন হক, স্বপ্নচারী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা তানোর, রাজশাহীর সভাপতি মো. রুবেল হোসেন মিন্টু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিকা মারান্ডী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, টাটকা ফাউন্ডেশন রাজশাহীর সভাপতি আমান উল্লাহ, সচ্ছলতা এসোসিয়েশন রাজশাহীর সভাপতি এহতেশামুল আলম জোহা, নৃত্য শিল্পী ও ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়ের সাধারণ সম্পাদক রবিন শেখ, নিউজনাউ টুয়েন্টিফোর এর তরুণ সাংবাদিক তানজিলা আক্তার মিমি স্বপ্নবৃত্ত রাজশাহী সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম, গ্রীণ ভয়েস রাজশাহী কলেজ শাখার সভাপতি নাহিদ হাসান, রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাবেদ শাকিল।

প্রস্তাবনায় স্থানীয় ও জাতীয় নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে দেশের কি স্টোন প্রজাতি সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া এবং রাজশাহীসহ দেশব্যাপী গাছপালা ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, ভূমিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, ভূগর্ভস্থ পানি স্তর রক্ষা, জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি, মাইক্রোক্লাইমেট নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি আবর্তন, চরম অবস্থায় অভিযোজনসহ শুষ্ক অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষায় বৈচিত্র্যময় গাছপালা কার্যকর ভূমিকা পালন করে তাই দেশব্যাপী গাছপালা সংরক্ষণে জরিপ ও তালিকা প্রণয়ন, হুমকিসমূহ চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ পরিকল্পনা করা, বাসস্থান রক্ষা, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ, পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে যুক্তকরণ এবং ‘প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষসহ সকল প্রকার বৃক্ষ সংরক্ষণে যুগোপযোগী আইন’ ও ‘বিধিমালা’ দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত্বের সুপারিশ করা হয়েছে।

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো ঠিক করতে সংবিধান পুনর্লিখন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ঠিক করা ও সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য গণপরিষদ (কনষ্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেম্বলি) গঠন, ব্রিটিশ শাসনআমলে রচিত আইনসমূহ রহিত করে সময়োপযোগী আইন রচনা ও ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ এর দ্রুত সংস্কার এর কথা বলা হয়েছে।

সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত/আধাসরকারি/বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার কর্মকান্ডে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করন, কৃষিব্যবস্থায় লিঙ্গ-জাতি-বয়স ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে পারিবারিক কৃষিকে উৎসাহিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃষক-জেলে ও প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর পেশাজীবী, কৃষিতে যুক্ত যুব তরুণ সমাজের জন্য প্রণোদনা ও সামাজিক সম্মান কাঠামোগতভাবে স্বীকৃতি ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১৯’ এর খসড়া বিলটি চূড়ান্ত করে দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। কৃষিজমি নষ্ট করে পুকুর খনন, ইট ভাটার অনুমোদন বন্ধ করা। মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকা এবং দেশের সকল পৌর এলাকাসহ সর্বত্র অবস্থিত পুকুর-দিঘী, খাল-বিল-খাড়ি, হাওর-বাওড়, নদী-নালা, ঝিল, লেক, জলাশয়-জলাধার-জলাভূমি, প্লাবনভূমি, বন ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সেগুলোকে ভরাট বন্ধ, দখল-দূষণমুক্ত এবং লিজ বাতিল করে তাতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করন; ‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০’ এর যুগোপযোগী সংস্কার ও সর্বত্র অবস্থিত খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যানগুলো সুরক্ষায় দখল-দূষণমুক্ত ও জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করণের বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়াও জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত ‘আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনে’ দ্রুত বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর করতে হবে উল্লেখ করে বলা হয় ভাটির দেশ হিসেবে এই আইনের সুবিধা শতভাগ বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশের সকল (শাখা ও উপ নদ-নদীসহ) নদ-নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদ-নদীগুলোর গতিপথ অপরিবর্তিত রেখে যথাযথভাবে ‘ক্যাপিট্যাল ড্রেজিং’ করে দেশের অভ্যান্তরীন ও আন্তর্জাতিক ‘নৌ পথ’ চালুর কথাও বলা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় বরেন্দ্র অঞ্চল ও জলবায়ু নায্যতায় বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূমি পূণরুদ্ধার, খরা সহনশীলতা, মরুময়তা ও পানিসংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ‘খরা তহবিল’ গঠন ও খরাপিড়িতদের জন্য ‘খরা ভাতা’ চালুর কথা বলা হয়েছে।

রাজশাহীর সকল পুকুর-দিঘী, খাল-বিল-খাড়ি, হাওর-বাওড়, নদী-নালা, ঝিল, লেক, জলাশয়-জলাধার-জলাভূমি, প্লাবনভূমি, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন, ভরাট বন্ধ, ইতোমধ্যে ভরাটকৃত পুকুর জলাশয়, জলাভূমি পুনরুদ্ধারসহ পুকুর, জলাশয়, জলাভূমির জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণিসম্পদসহ পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল পুকুর, জলাশয়, জলাধারগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা, প্রয়োজনে অধিগ্রহণ এবং অধিগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত পুকুর, জলাশয়, জলাধারগুলোর মালিকগণকে প্রণোদনা প্রদান করা, শহরের পুকুর, জলাশয়-জলাধার-জলাভূমি সংরক্ষণার্থে, ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুর জলাশয়ের জন্য প্রনোদনা বরাদ্দ এবং ভবিষ্যতে অধিগ্রহনের নীতিমালা প্রণয়ন বর্তমান বাস্তবতায় করার পাশাপাশি বৈশি^ক মানদন্ড অনুযায়ী শহরের মোট ভূমির ১০ থেকে ১২ শতাংশ এলাকা জলাশয় ও ১৫ শতাংশ বনভুমি নিশ্চিত করার সুপারিশ ও করা হয়েছে।

সেখানে আরও প্রকাশ্যে এবং পাবলিক প্লেসে সকল প্রকার ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করন। ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) ও (সংশোধন) আইন, ২০১৩’, ‘ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫’ এর যুগোপযোগী সংস্কার করে কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরনে সড়ক দুর্ঘনারোধ, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে অবকাঠামোর মান উন্নয়ন, অপরিকল্পিত স্টপেজ অপসারণ ও সড়ক দখলমুক্তকরণ, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডিজিটালাইজেশন, লোকবল ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি ‘সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮’ এর বাস্তবায়ন। রাষ্ট্র পুনর্গঠন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের/বিভিন্ন অধিদপ্তর-পরিদপ্তরের নানাবিধ কর্মকান্ড বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শহর বা এলাকা ভিত্তিক কর্মরত সেচ্ছাসেবী সংগঠন/জনসংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি, নিষ্ঠাবান তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীদেরকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশও করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রস্তাবনাটির অনুলিপি মাননীয় উপদেষ্টা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; বানিজ্য মন্ত্রণালয়; ভূমি মন্ত্রণালয়; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; সচিব, জন বিভাগ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়; মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক, রাজশাহী বরাবর রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content