মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:৩৪:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজশাহীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে শাহমখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাছুমা মুস্তারী ও প্রতারক আক্তারুল ইসলামের যোগসাজশে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় রাজশাহীর আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভি’র ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম, আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার সাংবাদিক নাজমুল হক এবং একজন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত
গত ২৬ আগস্ট রাজশাহী অগ্রণী ব্যাংকের আরডিএ শাখায় জমি নিলামকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সেখানে পেশাগত দায়িত্বে উপস্থিত হন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এসময় কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয়দানকারী প্রতারক আক্তারুল ইসলামের সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। সাংবাদিকদের একজনের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন আক্তার। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
সাংবাদিকরা এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে ওসি মাছুমা মুস্তারী মামলা নিতে গড়িমসি শুরু করে। পরে আরও সাংবাদিকদের উপস্থিতি ও ফোন কলের কারণে মামলা না নিয়ে কেবল একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। এতে সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। পরে ওসি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ হলে ক্ষপে ১ সপ্তাহ পর উল্টো প্রতারক আক্তারকে বাদী করে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা (নম্বর-২/২০২৫) রেকর্ড করেন ওসি মাছুমা মুস্তারী।
সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভ
সাংবাদিক নেতারা বলছেন—এটি স্পষ্টতই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। সাংবাদিকরা ভুক্তভোগী হওয়া সত্ত্বেও তাদের আসামি বানিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। গণমাধ্যম সংগঠনগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে—“সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ শাহমখদুম থানার ওসি গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করেছেন।”
মামলার অসংগতি
প্রতারক আক্তার অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিকরা তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু যখন তাকে মামলার বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি কয়জনের নামে মামলা সেটাও বলতে পারেনা । শুধু ২ জন সাংবাদিকের নাম বলতে পারেন। বাকি নামগুলোর ব্যাপারে কিছু বলতে না পেরে “আপনি থানায় যোগযোগ করেন,আমি মানসিক চাপে আছি, আপনি ভালো থাকেন।” বলে কল কেটে দেন এবং নাম্বার ব্ল্যাকলিস্ট করে দেন। (সাংবাদিকদের কাছে এর কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে)।
অথচ মামলার কাগজে ৬ সাংবাদিকের নাম, পত্রিকার নাম, এমনকি কয়েকজনের পিতা-মাতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এসব স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, ওসি মাছুমা মুস্তারীর কারসাজিতেই মামলাটি সাজানো হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ওসি’র অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়াতেই প্রতারকের সহযোগিতায় সাংবাদিকদের ফাঁসানো হয়েছে।
ওসি মাছুমা মুস্তারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী দীর্ঘ ১২ বছর ধরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন । যখন তার কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে, তখন তাকে এক থানা থেকে অন্য থানায় সরিয়ে দেওয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-
আরও অভিযোগ উঠেছে, বিগত সময়ে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের নেতাদের খুশি করতে বিএনপি-জামাত নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় আটক, নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন তিনি। আবার ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর যেসব আওয়ামী নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়নি কিন্তু বিএনপি – জামাত নেতাকর্মীর নিকট থেকে ছবি-ভিডিও পেয়েছে, তাদের মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মাসোহারা আদায় করেছেন।
বর্তমানে তিনি বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের খুশি করতেই ব্যস্ত। এদিকে শাহমখদুম থানাধীন এলাকায় বেড়েছে ছিনতাই, রমরমা মাদক ব্যবসা ও জুয়ার বোর্ড, কিন্তু কোনো অভিযান নেই।
সম্পদের অভিযোগ
শাহমখদুম থানার ওসি মাছুমা মুস্তারী মহানগরীর কাজলা মৌজায় একটি ৭ তলা ভবন নির্মাণ করছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর আগে জমি কেনার পর থেকেই ওই বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। জমি নিয়ে জটিলতা থাকলেও ক্ষমতার দাপটে তিনি বাড়ি নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, তার স্বামী ঢাকার একটি বাইংহাউসে চাকরি করেন। প্রশ্ন উঠেছে—একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সীমিত বেতনের বাইরে এত কোটি টাকার সম্পদের উৎস কোথায়?
পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
আরএমপি’র মিডিয়া মুখপাত্র এডিসি গাজিউর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কোনো মন্তব্য দেননি। তবে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু সুফিয়ান এ বিষয়ে বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কেউ নির্দোষ হলে তদন্ত শেষে তার নাম বাদ যাবে।”
সাংবাদিক সমাজের হুঁশিয়ারি
সাংবাদিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে—এ ঘটনায় তারা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। তাদের মতে, গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন এবং সংবিধান প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখানে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এমন মামলা শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, গোটা গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখে ফেলছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন।

















