অপরাধ - দূর্নীতি

রাজশাহীতে নিলামে পানির দরে বিক্রি ১,৮৫৩ গাছ—গণদাবি, উন্নয়ন হোক পরিবেশ বাঁচিয়ে

  মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন ৭ অক্টোবর ২০২৫ , ৭:৪৮:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

রামেবির ১,৮৫৩ গাছ পানির দরে বিক্রি—সিন্ডিকেট ও দরপত্রে বাধার অভিযোগ; ওয়াসা ও সার্কিট হাউস প্রকল্পেও গাছ কাটার সিদ্ধান্তে তীব্র উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য বাজেসিলিন্দা মৌজার ২০৫ বিঘা জমির ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ নিলামে পানির দরে বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। অথচ কাঠ ব্যবসায়ীদের হিসাবে এসব গাছের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকা। নিলাম প্রক্রিয়াকে ঘিরে উঠেছে সিন্ডিকেট ও দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে । এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে দরপত্র খোলা হয়। মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে রোমিন এন্টারপ্রাইজ সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার দর দেয়। অন্য চার প্রতিষ্ঠানের দর যথাক্রমে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার, ১৮ লাখ, ৮ লাখ ও ৬ লাখ টাকা। অভিযোগ, এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে দর দিয়েছে এবং বাইরের কাউকে অংশ নিতে দেয়নি।

 

ঠিকাদার চান সওদাগর অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁদের ম্যানেজারকে আল মামুন রাব্বুল নামের একজন ধাক্কাধাক্কি করে দরপত্র জমা দিতে বাধা দেন। তিনি বলেন, “তাঁরা সিন্ডিকেট করে কম দামে গাছ নিয়েছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। পুনরায় নিলাম না হলে থানায় অভিযোগ করব।”

 

অভিযুক্ত আল মামুন রাব্বুল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি যাইনি। আমার লাইসেন্স সর্বোচ্চ দর দিয়েছে। কেউ বাধা পেলে অভিযোগ করুক, আমার অসুবিধা নাই।”

 

রামেবির উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. জাওয়াদুল হক এ বিষয়ে ফোন ধরেননি। তবে সেকশন অফিসার রেজাউল উদ্দিন জানান, কয়েকজন ঠিকাদারের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।

 

শুধু রামেবি নয়, রাজশাহীর আরও দুটি প্রকল্পেও গাছ কাটার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস)-এর সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক জানান, ওয়াসার পাইপলাইন প্রকল্পে ৪১৮টি এবং সার্কিট হাউস সম্প্রসারণে ৫২টি গাছ কাটা হবে। সব মিলিয়ে তিন প্রকল্পে ২,৩২৩টি গাছ বিপন্ন।

 

তিনি বলেন, “রাজশাহীর মানুষের প্রাণের জায়গা এই পুরোনো গাছগুলো আমাদের পরিবেশের সুরক্ষা বর্ম। বারবার অভিযোগ, স্মারকলিপি, মানববন্ধন আর সংবাদ প্রকাশের পরও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ডিসি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তর কথায় সীমাবদ্ধ, কাজে নয়। স্থায়ী সমাধান না হলে রাজশাহী আর বাসযোগ্য শহর থাকবে না।”

 

রোববার কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তিন দফা দাবি জানিয়েছে—

১. সার্কিট হাউস সম্প্রসারণে গাছ কাটা যাবে না, সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।

২. ভবিষ্যতের উন্নয়ন প্রকল্পে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে পরিবেশবাদী সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

 

অনুলিপি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসক, আরডিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এবং গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে।

 

রাজশাহীর পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন—বারবার সতর্ক করার পরও একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে রাজশাহী নগরীর সবুজ আবরণ ধ্বংস হয়ে যাবে, ঝুঁকিতে পড়বে মানুষের জীবনযাপন।

আরও খবর

Sponsered content