অপরাধ - দূর্নীতি

আবাসিক হোটেলের আড়ালে দেহ ব্যবসা ও মাদকের আসর

  মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৮:০০:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন গণকপাড়ায় আবাসিক হোটেলের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা ও মাদক সেবনের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে। শিক্ষা নগরীতে বিভিন্ন জেলা থেকে পড়তে আসা কলেজ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা ও অন্যান্য নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। হোস্টেলে থাকা অনেক তরুণ–তরুণী ‘রুম ডেট’ করার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে হোটেল পদ্মাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি আবাসিক হোটেলকে।

 

গত কয়েকদিন সরেজমিনে হোটেল পদ্মার সামনে দেখা যায়—বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ নিয়মিত হোটেলে প্রবেশ করছে। কেউ ২০ মিনিট, কেউবা এক ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় দোকানদার ও এলাকাবাসীরা জানান, পাঁচ আগস্টের পর প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে প্রায় দিন–রাতই চলছে এসব অনৈতিক কার্যক্রম। স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হোটেল মালিক আজাদের গভীর সম্পর্ক আছে বলে অভিযোগ তাদের।

হোটেল পদ্মার দুই ধাপ দূরেই রয়েছে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। তা সত্ত্বেও কখনও কোনো অভিযান হয়নি বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এক স্থানীয় জানান—ডিবি প্রায় দুই বছর আগে একবার অভিযান দিয়েছিল। কিন্তু থানা বা ফাঁড়ি পুলিশের অভিযান কখনো দেখি নাই। রাজশাহীতে হোটেলে ডিবি ছাড়া অন্য কোনো পুলিশের অভিযান চোখে পড়ে না।

নগরীর গনকপাড়া মিষ্টান্ন ভান্ডারের গলিতে অবস্থিত হোটেল পদ্মা আবাসিক

নগরীর গনকপাড়া মিষ্টান্ন ভান্ডারের গলিতে অবস্থিত হোটেল পদ্মা আবাসিক – ছবি- সকালের বুলেটিন 

 

এলাকাবাসীরা বলেন—হোটেল পদ্মার আশপাশে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে। সেখানে থাকা পাতিনেতাদের প্রশ্রয়ে আজাদ দিনের বেলায়ও দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের ভাষায়—প্রশাসন আর নেতাদের আশ্রয় না থাকলে আজাদ এত সাহস পাবে কীভাবে? অন্য জেলা থেকে এসে রাজশাহীতে সে এমন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছর বছর।

 

স্থানীয়রা আরও জানান —আজাদ তো একেবারে বাজে সে খারাপ মেয়ে রাখে তাই খারাপ গুলি ওই হোটেলে যায়। এই হোটেলে ছাড়া রাজশাহীর অন্য আবাসিক হোটেলের কারণে যুবক-যুবতীর ভুল পথে এগোচ্ছে। দিন রাত হোটেল গুলিতে ছাত্র-ছাত্রী যখন ইচ্ছা ডুকছে বের হচ্ছে । পূর্বে প্রশাসন নিয়মিত হোটেল পরিদর্শন করে রেজিস্টার খাতা মিলিয়ে দেখত। এখন তা না থাকায় তরুণ প্রজন্মের ছেলে–মেয়েরা নিশ্চিন্তে ডেটিং করছে।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেল মালিক আজাদ বেশ স্বচ্ছন্দভাবেই বলেন— প্রশাসন আর স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন একটু সাবধানে চুপচাপ মাত্র দুইজন মেয়েকে রেখেছি, সমস্যা হলে কাজের মেয়ে বলে চালিয়ে দেব। কারো ক্ষতি করি না। স্থানীয় মানুষ আর নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখেই চলি। আপনিও আসবেন মাঝে মাঝে, চা খাব একসাথে—বুঝতে পারবেন তখন আমি কতটা মিশুক মানুষ।

 

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়—হোটেল পদ্মার মালিক আজাদকে একাধিকবার আটক করা হয়েছিল। প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি কয়েকবার হোটেলের নাম বা অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা চলমান, তবে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার নতুন কৌশলে একই ব্যবসা শুরু করেন। আজাদের মধ্যে লজ্জা বা অনুশোচনার কোনো লক্ষণ নেই বলেও জানিয়ে।

 

বিষয়টি জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পুলিশ কমিশনার মাঈনুল ইসলাম বলেছেন—আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। প্রতি মাসেই বিশেষ অভিযান দিই। খুব শিগগিরই ওই স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

এলাকাবাসীর আশঙ্কা—দেহ ব্যবসা ও মাদক লেনদেনের কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যুব সমাজকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষায় তারা অবিলম্বে কঠোর প্রশাসনিক অভিযান, সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার এবং হোটেল পদ্মাসহ জড়িত বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আরও খবর

Sponsered content