অন্যান্য

ফেলে দেওয়া চুল থেকে নারীদের কর্মসংস্হান

  সকালের বুলেটিন ডেক্স: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৯:২২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

 

মোঃঅপুশাহ্, চিরিরবন্দর:

 

মেয়েদের ঝরেপড়া চুল এখন আর ফেলনা নয়। এসব ফেলে দেওয়া চুল

দিয়েই আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। দিনাজপুরের চিরিবন্দর উপজেলায় নিজ

উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শত শত চুল প্রসেসিং কারখানা। এসব কারখানার

অধিকাংশই আবার উপজেলার রানীরবন্দর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে

অবস্থিত। এতে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি

হয়েছে। পাশাপাশি বদলে গেছে তাদের ভাগ্য। নারী-পুরুষ কাজ করে

আয় করছেন হাজার হাজার টাকা।

এসব কারখানায় একজন দক্ষ শ্রমিকের বেতন ১৫ হাজার টাকা থেকে

২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। নারী শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরার

ভিত্তিতে গুটি চুল বাছাই এবং পরিষ্কারের কাজ করে থাকেন। এতে তারা

পেয়ে থাকেন ১০০ টাকা। সেই হিসেবে একজন নারী শ্রমিক মাসে এই

কাজ করে আয় করেন ৩ হাজার টাকা। নারী শ্রমিকরা বলছেন, বর্তমান

বাজার মূল্য অনুযায়ী এই মজুরি দিয়ে তাদের জীবন চালানো সম্ভব নয়।

তবুও উপায় না পেয়ে সংসারের অভাব দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন

এই গুটি চুল প্রথমে মহিলা শ্রমিকের মাধ্যমে গুটি ছাড়িয়ে আলাদা করে

প্রাথমিক পরিষ্কার এবং বাছাই কাজ করা হয়। এরপর এই বাছাই করা

চুলগুলো ডিটার্জেন্ট পাউডার ও শ্যাম্পু দিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে

পরিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো পরিষ্কার করা এই চুল কারখানায়

নিয়ে কাটিং মেশিনের মাধ্যমে কাঁচি করা হয়। কাঁচি করা চুলগুলোকে

একই সঙ্গে রাবার দিয়ে ছোট ছোট গোছায় বেঁধে আলাদা করা হয়।

কারখানায় এই ছোট ছোট গোছা করা চুলগুলোকে বলা হয় লাচি। এবার

এই লাচি করা চুল আবার শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে ধুয়ে

বাতাসে শুকানো হয়। শুকিয়ে চুল যখন উজ্জ্বল হয় তখন এগুলোকে

শেষবারের মতো কাটিং মেশিনে নেওয়া হয় ফিতা দিয়ে মেপে গ্রেডিং

করে রেমি তৈরির জন্য। এই রেমি করা চুলই কারখানা থেকে বিক্রির

জন্য প্রস্তুতকৃত চুল। এরপর কারখানা মালিকরা নিজেরাই ঢাকায় গিয়ে

চুল বিক্রি করে থাকেন। রেমি (প্রসেসিং) চুলের দৈর্ঘ্যের ওপরই এর মূল্য

নির্ভর করে। চুল যত লম্বা হবে বাজার দরও তত বেশি। চুলের এই

দৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে এর বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ৬ ইঞ্চি চুল এক

হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২-৩২ ইঞ্চি সাইজের চুল

প্রতিকেজি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২২ ইঞ্চি থেকে ৩২ মাপের নারী শ্রমিক হামিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন অনেক চুলের করখানা। আমরা গরিব মানুষ দিন আনি দিন খাই। বাসায় বসে না থেকে এখানে চুলের কাজ করি। সারদিন কাজ করে ১০০ টাকা পাই মাসে ৩০ দিন কাজ করলে তিন হাজার টাকা পাই। বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বেশি কিন্তু আমাদের মতো নারী শ্রমিকদের মজুরি কম।নারী শ্রমিক মরিয়ম বেগম বলেন, ‘চুলের কারাখানায় সারাদিন কাজ করে ১০০ টাকা পাই। পোষায় না কিন্তু উপায় নাই এই টাকা দিয়ে বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারি। এজন্য কষ্ট করে হলেও কাজটা ছাড়ছি না চুলের মিস্ত্রি রাব্বি সরকার বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে এখানে কাজ করতে এসেছি। প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পাড়ি।কারখানার মালিক ফজলুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে মেয়েদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল সংগ্রহ করে ঢাকায় বিক্রি করি। তারা সেগুলো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। আমরা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে এক কেজি চুল ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে। কারখানার নারী শ্রমিকদের দিয়ে প্রসেসিং করি। সেই চুল ছোটবড় সাইজ অনুযায়ী বিক্রি করি। তবুও আমাদের লাভ হয় না। কারখানায়

৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করে। তাদের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করে দিতে হয়। আবার চুলের মিস্ত্রিদের মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়।নারী উদ্যোক্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) লায়লা বানু বলেন আমাদের উপজেলায় শতাধিকের বেশি কারখানায় ১০ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক চুলের কাজ করেন। কিন্তু তাদের মজুরি একবারে কম। এ সময় ১০০ টাকা মজুরি দিয়ে একটা মানুষের সংসার কিভাবে চলবে কারখানাগুলোতে চুল প্রসেসিং করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে লাভবান হচ্ছেন কারখানার মালিকরা। কিন্তু নারী শ্রমিকরা সারাদিন কাজ করেন কোনো রকম স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই।

আরও খবর

Sponsered content