সকালের বুলেটিনে ডেস্ক ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:৫৩:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকার হটানো ও নির্বাচন বানচাল করতে ভয়াবহ নাশকতার ছক কষা হচ্ছে—এমন উদ্বেগজনক তথ্য মিলেছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। এ পরিকল্পনায় দেশের বাইরে পলাতক আওয়ামীপন্থী নেতা-কর্মী, সাবেক আমলা ও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশের ভেতরের কিছু ব্যক্তিও সক্রিয় সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহীর বিতর্কিত আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিক আব্দুল বাতেনকে এমনই একজন সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ভুক্তভোগীরা। তাদের বক্তব্যে তার কর্মকাণ্ডের এক অন্ধকার চিত্র উঠে এসেছে।
গোদাগাড়ীর সাবেক ক্ষমতাধর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন বাতেন। অভিযোগ রয়েছে—বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান পরিচালনায় সংবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ, ব্ল্যাকমেইল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্যাতনকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, গত বছর সেপ্টেম্বরে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিনি ওমর ফারুককে পালাতে সহায়তা করেন। বর্তমানে ফারুক চৌধুরীর নিয়ন্ত্রিত মাদক ব্যবসাও বাতেন পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব মাদকের টাকা লেনদেন হয় রাজশাহীর ওমর থিম প্লাজায়—যার মালিক সাবেক এমপি নিজে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্লাজার একাধিক দোকান মালিক গোদাগাড়ীর মাদক গডফাদারদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। টাকার বিনিময়ে গরিব মানুষকে মাদক কারবারে ব্যবহার করা হয়, ফলে অভিযানে তারা ধরা পড়লেও মূল হোতারা রয়ে যায় নিরাপদে।
অভিযোগ রয়েছে, বাতেন বিগত সময় গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি সাবেক এমপির প্রভাব খাটিয়ে সরকারি দপ্তরে সুবিধা নিয়েছেন। পুকুর দখল, বিগত সরকারের আমলে অবৈধ নির্বাচনে সহযোগিতা, ব্যালটে অবৈধ সিল মারা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে সুবিধা নেওয়া এবং উপজেলা সমবায় সমিতির সাথে সখ্যতা রেখে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে এবং বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে গোদাগাড়ীর মহিষাল বাড়িতে ২ বার মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক গোদাগাড়ী উপজেলার একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন নিজেকে এমপি ফারুক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে জোর পূর্বক ভাবে বিজ্ঞাপন ও মোটা অংকের অর্থ দাবি করে আসছিলেন এই আব্দুল বাতেন। নিজের দাবি পূরন না হলেই শুরু করতেন মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে সরকারি কর্মকর্তাদের হয়রানি।
এছাড়াও নৌকার প্রচার, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের নির্বাচনের প্রচার সাথে গোদাগাড়ীতে এমপি নির্বাচনে ফারুক চৌধুরীর প্রচারের প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীর নিকট পৌঁছিয়েছে।
জানা যায়, শেখ হাসিনা পতনের পর বাতেন কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি আবারও সক্রিয় হন ‘পদ্মা টাইমস ২৪’ অনলাইন নিউজ পোর্টাল—যা আওয়ামী লীগপন্থী সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচিত। পোর্টালটির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা বেন্টু। শেখ হাসিনা পতনের পর দুর্নীতির প্রমাণ মুছে ফেলে নতুনভাবে সংবাদ প্রকাশ শুরু হয়।
সম্পাদক অন্যজন হলেও পেছন থেকে বেন্টুর নির্দেশে রাজশাহীতে বিএনপিকে বিতর্ক করার লক্ষ্য সক্রিয় ভূমিকায় আব্দুল বাতেন। জেলা বিএনপি নেতাদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কৌশল করে ফেসবুকে সাইট বন্ধের ঘোষণা দেন। যার ফলে বিএনপির ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন হয় এবং সমালোচনা বাড়তে থাকে। পরে পুলিশ কমিশনারের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার সংবাদ প্রকাশ শুরু করেন, কিন্তু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ বন্ধ হয়নি—এমন অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।ক্ষমা চেয়ে পুনরায় চালু করার কিছুদিন পর আবারও বাতেন রাজশাহীর বাস টার্মিনালে বিএনপি সমর্থিত দুই পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ে পদ্মা টাইমস ২৪-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ওবায়দুল নামের এক সাধারণ মাছচাষীকে বিএনপি নেতা হিসেবে উল্লেখ করে আবারো বিএনপিকে সমালোচনায় ফেলে। এই প্রতিবেদনে বাতেনের মনগড়া থানার ওসির মিথ্যা বক্তব্যও স্থান পায়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মাছচাষী ওবায়দুল বলেন—
“আমি কোনো দিন রাজনীতি করিনি। মাছ চাষ করে সংসার চালাই। অথচ সংবাদে আমাকে বিএনপি নেতা বানানো হয়েছে আমার নাকি দলবল রয়েছে। ঘটনার সময় আমি বোয়ালিয়া থানার সামনে ছিলাম, সিসিটিভি ফুটেজেই তা প্রমাণ হবে। অথচ অভিযোগ দায়েরের ১১ ঘণ্টা পর বাতেন সংবাদ প্রকাশ করেছেন, যেখানে ওসি বলেছেন অভিযোগ হয়নি। এটা মিথ্যা প্রমাণের বড় উদাহরণ।”
ওবায়দুলের এলাকাবাসী জানায়, বাতেন ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করছেন, যা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতির পরিপন্থী।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিল এবং পদধারী একজন ছিল। বর্তমানে মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এটা আমি শুনেছি এর বেশি জানা নেই।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন,সাংবাদিকরা যারা সত্য লেখে তাদেরকে বিএনপি সন্মান করে আর যারা মিথ্যা লেখালেখি করে তাদেরকে বিএনপি ঘৃণা করে,রাজশাহীতে আওয়ামীলীগের দোসরদের কোন ঠাই হবেনা।
সুশীল সমাজ মনে করছে, সাংবাদিকতার মতো সংবেদনশীল পেশাকে আড়াল করে বাতেনের বিরুদ্ধে ওঠা রাজনৈতিক সম্পৃক্তকতার অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা শুধু সাংবাদিকতার মর্যাদাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং রাজশাহীর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।